শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪০ পূর্বাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : নারীর বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছায় চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যাচ্ছেন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ৫ যুবকের একটি স্বেচ্ছাসেবী দল। তারা কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী নারীদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছেন। তারা রুখে দাঁড়াচ্ছেন জোরপূর্বক বিয়ের বিরুদ্ধে। এর মধ্য দিয়ে হয়ে উঠছেন রোল মডেল। তাদেরই একজন কৈশোর উত্তীর্ণ মোহাম্মদ। যখনই তিনি জানতে পারেন কোনো নারীকে যৌন অবমাননা করা হয়েছে বা অশালীন মন্তব্য করা হয়েছে তখনই দায়ীদের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানান তিনি। এসব স্বেচ্ছাসেবককে নারীর বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতার লড়াইয়ে রোল মডেল হিসেবে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর।
মোহাম্মদ বলেন, যখন আমরা যৌন সহিংসতার বিষয়ে আলোচনা করি তখন অন্য ছেলেদের বলি- তুমি জন্মেছ একজন মায়ের গর্ভে। তোমার বোন আছে। কোনো যুবক যখন একজন নারীর বিষয়ে ভাবেন, তখন তাকে আমি বলি, আপনার মা অথবা বোনের কথা ভাবুন। আপনি কি চান তাদের এমন কিছু ঘটে যাক?
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। এতে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন কমপক্ষে ৭ লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা। আগে থেকে যেসব রোহিঙ্গা এখানে একই অবস্থার শিকারে পরিণত হয়ে এসে অবস্থান করছিলেন তাদেরকে মিলিয়ে মোট রোহিঙ্গার সংখ্যা কমপক্ষে ১০ লাখ। এখানে গাদাগাদি করে অবস্থান করছেন তারা। ফলে নানা রকম অনিয়ম ঘটছে সেখানে। প্রলুব্ধ করে তাদেরকে পাচারের চেষ্টা করা হচ্ছে। নারীদের দিকে লোলুপ দৃষ্টি পড়ে আছে নরপিশাচদের। বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী সেখানে উগ্রবাদের উত্থান ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এসব রোহিঙ্গাকে সনাক্তকরণ, তাদেরকে কাউন্সেলিং, বিভিন্ন রকম সেবায় সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে ইউএনএইচসিআর।
গৃহীত হয়েছে রোল মডেল প্রোগ্রাম। এর উদ্দেশ্য পুরুষদের যৌন হয়রানি চ্যালেঞ্জ করতে উৎসাহিত করা। ২৩ বছর বয়সী মোহাম্মদ বলেন, শরণার্থীদের মধ্যে যুবকদের শিক্ষিত করা প্রয়োজন আমাদের। তাই আমাদের এটা ব্যাখ্যা করা দরকার যে, আমরা কি করছি এবং তারা কি করতে পারে। তিনি আরো বলেন, অনেকজ যুবকই আমাদেরকে বলেন যে, আমরা তো অকর্মা। আমাদের কোনো কাজ নেই। এদের অনেকেই অশিক্ষিত। তারা মনে করে, তাদের যা খুশি তাই করতে পারে একজন যুবতীর সঙ্গে। আরও ভাবে, এরপর সে সরে যেতে পারে।
৫ সদস্যের একটি গ্রুপ এই কর্মসূচিতে কাজ করছেন একজন ইমামের নেতৃত্বে। তাদের উদ্দেশ্য, নেতিবাচক এসব বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং এমন অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো।
এই গ্রুপের যুবকরা সবাই শরণার্থীদের ভিতরকার স্বেচ্ছাসেবী। তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে গৃহ সহিংসতা, বাল্য বিয়ে, যৌতুক দাবি, বহুবিবাহ, নারীদের বিরুদ্ধে আগ্রাসী আচরণের মতো ইস্যুগুলোতে। এ কথা বলেছেন ইউএনএইচসিআরের প্রোগ্রাম সমন্বয়ক জাহিদুর রহমান। তিনি বলেন, এই কর্মসূচি নতুন। এ জন্য সংগঠনকরা মসজিদে মসজিদে এবং কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে বৈঠক করেন। যুবক রোল মডেলরা খেলাধুলার মধ্য দিয়ে অন্য যুবকদের উদ্বুদ্ধ করেন। এর মধ্য দিয়ে সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থা গড়ে তোলা হয়।